ঐতিহাসিক জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নৃশংস স্বৈরশাসনের পতনের প্রায় এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একদিকে পরাজিত স্বৈরাচার ও কিছু বিদেশি শক্তির মিথ্যা প্রচারণার মোকাবিলা করেছে, অন্যদিকে পতিত স্বৈরাচারের দ্বারা জুলাই অগাস্টে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তিবর্গ ও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সহযোগীদের বিচার শুরু করেছে এবং দেশের সংবিধান ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।
তবে উদ্বেগের বিষয় যে, জুলাই অভ্যুথানের ১০ মাস পরেও রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এখনও অধরাI দীর্ঘ সময়ের গণতন্ত্রহীনতা ও স্বৈরশাসনের পর সমাজের সকল স্তরে এখনো ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। পরাজিত শক্তি ও সুবিধাবাদীরা ভুক্তভোগীদের ন্যায্য অভিযোগ ও প্রতিবাদের আড়ালে নিজেদের গোপন উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মব ভায়োলেন্স নিত্যনৈমিত্যক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছেI ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ভূয়া মামলা দিয়ে নিরাপরাধ নাগরিকদের হয়রানি করার ঘটনা প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছেI
এই প্রেক্ষাপটে, নাগরিক কোয়ালিশনের সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ ও ব্যক্তিবর্গ মনে করছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে —যেমন নির্বাচনের রোডম্যাপ, রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার উদ্যোগে সরকারের অবস্থান, মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক, চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ, আশু প্রশাসনিক ও পুলিশ সংস্কার (যেগুলো নির্বাহী আদেশেই করা সম্ভব)— এইসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রক্রিয়াগত অস্বচ্ছতা বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে এবং সমাজ জুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ করে দিচ্ছে।
আমরা উদ্বিগ্ন যে, যদি দেশের পরিস্থিতি দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে না আসে, তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর অর্জিত সকল সাফল্য ভেস্তে যেতে পারে।
নাগরিক কোয়ালিশন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাছে দাবি জানাচ্ছি যে, তারা যেন অনতিবিলম্বে জাতির সামনে এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের উদ্দেশ্যে উপরে উল্লেখিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের পেছনের যুক্তি ও ব্যাখ্যা হাজির করেন।
আমরা মনে করি যে, সংস্কারের অর্জনযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য একটি স্পষ্ট সময়সীমার অনুপস্থিতি ও অস্পষ্টতা রাজনৈতিক অংশীজনদের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার ঘাটতি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত ৩টি মূল প্রতিশ্রুতি (সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন) পূরণের একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ অত্যাবশ্যক বলে আমরা মনে করছি। এই লক্ষ্যে, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলো ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা আমাদের আহ্বান-
- গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসমূহ ও জাতীয় ঐকমত কমিশনকে দ্রুততম সময়ে (জুলাইয়ের মধ্যে) রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠমো সুদৃঢ় করতে (ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরির করে স্বৈরতন্ত্রে ফিরে যাবার পথ রুদ্ধ করার মাধ্যমে) প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়সমূহে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে
- রাজনৈতিক দলসমূহকে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রণীত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করতে হবে
- খুব দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি সুস্পষ্ট নির্বাচনী সময়সূচির ঘোষণা করতে হবে
আরও পড়ুন : নাগরিক কোয়ালিশনের সাত প্রস্তাব কেন গুরুত্বপূর্ণ
বিবৃতি সম্পর্কিত সংবাদ : সংস্কার-বিচার-নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান নাগরিক কোয়ালিশনের, জুন ২, ২০২৫, ডেইলি স্টার; সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট রোডম্যাপ আবশ্যক: নাগরিক কোয়ালিশন, জুন ২, ২০২৫, প্রথম আলো